কে এই মাদক সম্রাজ্ঞী সিমা- রাজধানীর ভয়ঙ্কর শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী সিমা। চালচলন ও জীবনযাপনে তার আভিজাত্যের ছাপ। চলেন উচু তলার মানুষের সঙ্গে। মাদক ব্যবসা করে তিনি টাকার পাহাড় গড়েছেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গড়ে তুলেছেন ভুয়া ডিবি পুলিশ। সম্প্রতি পুলিশ তাকে আটক করেছে। তিনি এখন জেলে বন্দি।
দেখতে বেশ সুন্দরী এই মাদক সম্রাজ্ঞী। মাদক ব্যবসা কিটিয়ে রাখতে রূপের জাদুতে বহু পুরুষের মন ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন। বিয়ে তার কাছে পুতুল খেলার মতো। কারণ, পুরুষকে নিয়ে খেলতেই তার ভালো লাগে। তাই একে একে তিনি সাত বিয়ে করেছেন।
সিমার বয়স চল্লিশের মতো। অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি। রাজধানীর ‘টপ আন্ডারওয়ার্ল্ড’র একজন। এমন কোনও অপরাধ নেই, যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। মাদক সম্রাজ্ঞী সিমার উত্থানে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
অন্য দশ নারীর চেয়ে তিনি সুন্দরী। স্কুলের গন্ডি না পেরুলেও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার করেন তিনি। পরিপাটি পোশাক ও গহনা দিয়ে সবসময় নিজেকে আকর্ষণীয় করে রাখেন।
দেখলে যে কারো মনে হতে পারে- অভিজাত ঘরের মেয়ে তিনি। এখন অভিজাতভাবেই চলাফেরা করেন। কী নেই তার! আছে গাড়ি-বাড়িসহ বিপুল অর্থবিত্ত। কিন্তু এক সময়ের দরিদ্র সিমার কিভাবে এত অর্থবৈভব আসেলো, যে কারো প্রশ্ন আসতেই পারে। সেই প্রশ্নের উত্তরে রয়েছে সিমার উত্থানের গল্পে।
মাদক, দেহ ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেনি। সুন্দরী চেহারা দিয়ে পুরুষ শিকারও করেছেন। তার সুন্দরের মোহে যে পড়েছে, তার সর্বনাশ হয়েছে। একে একে ৬টি স্বামী বদলিয়ে তিনি এখন আছেন ৭ নম্বরের ঘরে।
রাজধানীর যে কয়েকজন মাদক সম্রাজ্ঞী রয়েছেন, সিমা তাদের সবার উপরে। রামপুরার ওলনে তার বাড়ি হলেও- রামপুরা, খিলগাঁহ, মুগদা, যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত তার মাদকের বিস্তার। এছাড়াও বাসা, ফ্ল্যাট ভাড়া করে চালান দেহ ব্যবসা। আর এসব করেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন সিমা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়া ১২ ভুয়া ডিবি পুলিশের সিন্ডিকেটটিও তার। তার স্বামী বারেক এ সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন। বারেক গোয়েন্দাদাদের হাতে ধরা পড়ার পর ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধার হয় এ সিমার কাছ থেকেই। বর্তমানে সিমাও ওই মামলায় আটক হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।
গ্রেপ্তারের পর তার নিকট থেকে পুরো সিন্ডিকেটের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম। পুলিশের বিভিন্ন পর্যাায়ের কর্মকর্তারা জানান সিমা একজন ভয়ংকর মাদক সিন্ডিকেটের নেত্রী। দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
সিমার বিষয়ে অনুসন্ধানে মিলেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। রামপুরার ওলনের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিমা মূলত তার নানা নানীর বাসায় পালিত। স্কুলে পড়া অবস্থায় সুন্দরী সিমা ছিল ধৃত প্রকৃতির। ক্লাশ সেভেন কিংবা এইটে পড়া অবস্থায় খসরু হায়দার বাবু নামের এক ধনি লোককে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন সিমা।
ওই সময় বাবুর স্ত্রী ও সন্তান ছিলো। এরপর কিছুদিন সেখানে থাকার পর মোটা অংকের টাকা নিয়ে পলাশ নামের অন্য আর এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন। কিছুদিন পলাশের সঙ্গে থাকার পর তার কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে আবারও চলে আসেন বাবুর নিকট।
এরপর আবার বাবুর সঙ্গে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে কাওরান বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী নজরুলকে বিয়ে করেন। এরপর সেখানেও কিছুদিন কাটনোর পর আবারও চলে আসেন রামপুরায়। এভাবে সীমা একে একে ৬টি স্বামী বদল করে রামপুরার আলোচিত নারীতে পরিনত হন।
প্রথমে বিয়ের মধ্যেই সিমাবব্ধ থাকলেও মাদকে জড়িয়ে যান সিমা। এক সময় তার নাম হয়ে যায় ফেন্সি সিমা। বেপরোয়া সিমা ক্রমেই তার পরিধি ও সহযোগীর সংখ্যা বাড়াতে থাকে। রামপুরা থেকে খিলগাঁও, খিলগাঁও থেকে সবুজবাগ, সবুজ বাগ থেকে যাত্রাবাড়ি পুরো এলাকায় সিমার দাপট। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, প্যাথেডিন, গাঁজাসহ এমন কোন নেশাদ্রব্য নাই যা সে ব্যবসা করেনি।
এরই মাঝে সিমা আবারও বিয়ে করেন। সর্বশেষ যাকে বিয়ে করেন সে আন্তজেলা ডাকাত ও ভুয়া ডিবি চক্রের অন্যতম দলনেতা বারেক। বারেককে সে এ কাজেই ব্যবহারের জন্য মূলত বিয়ে করে। বারেক সিমার পুরো মাদক জগৎ দেখাশুনার দ্বায়িত্ব পায়।
সিমা নিজেকে বিকশিত করতে রামপুরা কতিপয় নেতাদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। মাদক সম্রাজ্ঞী হওয়া সত্বেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনও করেন তিনি। সবাই জানে সিমা মাদক সম্রাজ্ঞী তারপরও যেন কেউ জানেনা।
মাদকের পাশাপাশি দেহ ব্যবসাও করান সিমা। অভিযোগ রয়েছে, রামপুরা, খিলগাঁও ও মালিবাগের বেশ কিছু ফ্ল্যাট রযেছে তার। আর এ সকল ফ্ল্যাটে দেহ ব্যবসা করান।
সর্বশেষ গত বছরের ১৮ জুলাই মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ১২ ভূয়া ডিবি পুলিশকে আটক করে। আটক হয় সিমার স্বামী বারেকও। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয় তার স্ত্রী মাদক সম্রাজ্ঞী সিমার কাছ থেকে।
তাকে গ্রেপ্তারও করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ননা গুঞ্জন। রামপুরার সর্বত্রই তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। স্থানীয় কয়েকজন নেতাও বিব্রত। বিভিন্ন দলীয় কর্মকান্ডে সিমার সঙ্গে ছবি থাকায় তারাও রয়েছেন সমালোচনার মুখে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিমার অপ্রতিরোধ্য উথ্যানে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। সামান্য দরিদ্র পরিবার হলেও সিমার এখন আভিযাত্যের শেষ নেই। আছে বাড়ি, গাড়ি ও কাড়ি কাড়ি টাকা। চলাফেরাও করেন সমাজের উচ্চ বিত্তবানদের সঙ্গে।
অভিযোগ রয়েছে, তার এ মাদক সম্রাজ্য ধরে রাখতে রয়েছে বিশেষ গুন্ডা বাহিনী। যারা প্রতিনিয়ত তাকে রক্ষা করে। তিনি যেখানে যান সেখানে অন্তত ১০/২০ জন গুন্ডা থাকে তার সঙ্গে। এগুলোকে মাসিক অথবা সাপ্তাহিক টাকা দেন সিমা।